তুরস্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে চিত্রিত করা হয়েছে এমন অভিযোগে চারজন কার্টুনিস্টকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। সোমবার (৩০ জুন) স্থানীয় সময় সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আলোচিত ওই কার্টুনটি একটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যেখানে একজন মুসলিম ও একজন ইহুদি ব্যক্তিকে ডানা ও আলোসহ হাত মেলাতে দেখা যায়, এবং তাদের নিচে বোমা ফেলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এতে মহানবী (সা.) এবং নবী মুসা (আ.)-কে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি।
কার্টুনটি প্রথমে নজরে না এলেও চার দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ইস্তাম্বুলে শত শত মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেন, 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি তুলে শরিয়া আইনের দাবিও জানান।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া বিষয়টিকে “উত্তেজনাপূর্ণ প্ররোচনা” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, যারা এই সাহস দেখিয়েছে তাদের আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্সির যোগাযোগ প্রধান ফাহরেত্তিন আলতুনও বিষয়টি নিন্দা করে বলেন, “এটা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত।”
তুর্কি দণ্ডবিধির ২১৬ ধারায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, ব্যঙ্গ পত্রিকা ‘লেমান’ দাবি করেছে, তাদের কার্টুনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে চিত্রিত করা হয়নি। কার্টুনে ব্যবহৃত 'মুহাম্মদ' নামটি ইসরায়েলের হামলায় নিহত একজন মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব করে, যা কোনওভাবেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশ করে না।
পত্রিকাটি আরও জানায়, “আমরা নির্যাতিত মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে চেয়েছি। কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে দুঃখ প্রকাশ করছি, তবে নবীকে ছোট করার কোনো ইচ্ছা ছিল না।”
তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন তুর্কি পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে অভিযুক্ত চার কার্টুনিস্টের গ্রেফতারের ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভিডিওতে লেখা ছিল, “তুমি নিরাপত্তা বাহিনী বা ন্যায়বিচার থেকে পালাতে পারবে না।”
বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা নবীর জন্য জীবন দেব’ স্লোগান দিয়ে পত্রিকার অফিসে হামলার চেষ্টা চালায় এবং সামনে এশার নামাজ আদায় করে। ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাভুত গুল জানান, চার অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের কাউকে আটক করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
অন্যদিকে, আরও কয়েকটি ধর্মীয় গোষ্ঠী মঙ্গলবার (১ জুলাই) নতুন করে পত্রিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।